সংগৃহীত ছবি

করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে দেশে চলমান বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরও ৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যমান পরিস্থিতি ১০ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে দেশের ওয়ার্ড পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক টিকা দান কার্যক্রম চলবে। এরপর ১১ আগস্ট থেকে শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলবে। সীমিত পরিসরে ‘রোটেশন করে’ চলবে গণপরিবহণ। তবে টিকা না নিয়ে কেউ কাজে যোগ দিতে পারবেন না। এছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সি নাগরিক টিকা ছাড়া ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা করলে অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। এতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভার্চুয়ালি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ বেড়েছে। সবাইকে ভ্যাকসিনেটেড হতে হবে। অফিস-আদালত ১১ আগস্ট থেকে খুলবে। এই কদিন বাস্তবতা লক্ষ্য করব। টেস্ট কেস হিসাবে দু-চার দিন দেখব। প্রয়োজন হলে জরুরি ভিত্তিতে বসে সিদ্ধান্ত নেব। অর্থনীতি সচল রাখাও দায়িত্ব। সেজন্য কিছু শিল্পকারখানা খোলা হয়েছে। যানবাহন সব চলবে না। রোটেশন অনুযায়ী চলবে। ১০০ গাড়ি থাকলে শ্রমিক নেতারা ঠিক করবেন, অল্পসংখ্যক চলবে। সীমিত আকারে গাড়ি চলবে। রেল ১০টার জায়গায় হয়তো পাঁচটা চলবে।’

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী এক সপ্তাহে এক কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ন্যূনতম দুটি করে কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ফলে আশা করছি কষ্ট করে ভ্যাকসিন নেওয়ার পেছনে দৌড়াতে হবে না। প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে একসঙ্গে সপ্তাহব্যাপী ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেখানে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শ্রমজীবী মানুষ, দোকানদার, বাসের হেলপারদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন না দিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। যার যার এলাকা থেকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। কেউ ভ্যাকসিন নিয়েছে কিনা, সেই তথ্য ওয়েবসাইটে চলে যাবে, কেউ মিথ্যা বলতে পারবেন না। দোকানপাট খোলার আগে ৭, ৮, ৯ আগস্ট ৩ দিন সুযোগ রাখলাম। এই সময়ের মধ্যে যাতে ভ্যাকসিন নিতে পারে সেই সুযোগ দিচ্ছি। ১১ আগস্ট থেকে যাতে দোকানপাট খুলতে পারে সভায় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টিকা না নিয়ে কেউ দোকান খুলতে পারবেন না বা বাইরে বেরোতে পারবেন না। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যারা বাইরে চলাফেরা করবেন, তারা টিকা না নিয়ে চললে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।

দেশেই টিকা উৎপাদনের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস কতদিন চলবে কেউ জানে না। যত শিগগির সম্ভব নিজেরা বা অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে যাতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি। সেটা হলে সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেব। চেষ্টা করব যাতে ৪-৫ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদন করা যায়। আর গুরুতর কোভিড রোগীদের জন্য হাসপাতালে আইসিইউ সংকট কাটাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের কনভেনশন সেন্টারে শনিবার থেকে ডেডিকেডেট আইসিইউ চালু হবে।

এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, হাসপাতালে আসন সংকট দেখা দেওয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের হোটেলে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ইতোমধ্যে হাসপাতালে ৯০ শতাংশ সিট ভর্তি হয়ে গেছে, রোগী আছে সিট ফাঁকা নেই। আইসিইউ অলরেডি ৯৫ শতাংশ অকুপাইড। এ চিন্তা করে আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করছি। সেটার কাজ চলমান। সেখানে ইমিডিয়েটলি আমরা হয়তো ৫০০-৬০০ বেড রেডি করতে পারব। পরে তা এক হাজার বেডে নেওয়া যাবে। করোনা আক্রান্ত সবার কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না। যেগুলো হালকা, মাইল্ড কেস, সে সব রোগীর জন্য আমরা আলাদা হোটেল ভাড়া করার চিন্তা করেছি। যে হোটেলের মধ্যে আমাদের ডাক্তার থাকবেন, নার্স থাকবেন, ওষুধপত্র থাকবে, কিছু অক্সিজেনের ব্যবস্থাও আমরা রাখব। হাসপাতাল করার আর জায়গা নেই। হাসপাতাল খালিও নেই। তাই আমরা এখন হোটেল খুঁজছি।

৭ আগস্ট থেকে প্রত্যেক ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ ৭ দিনে আমরা প্রায় এক কোটি টিকা দেব। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। এজন্য সভায় বিভিন্ন দপ্তরের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। টিকার ক্ষেত্রে বয়স্কদের আমরা অগ্রাধিকার দেব। পঞ্চাশোর্ধ যারা আছেন, তাদের আমরা অগ্রাধিকার দেব, এ বয়সিদের মৃত্যু এখন ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। আমাদের হাতে সোয়া কোটি টিকা আছে। আরও এক কোটি টিকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে। অর্থাৎ টিকা কর্মসূচি বজায় থাকবে। এনআইডির (জাতীয় পরিচয়পত্র) মাধ্যমে আমরা ভ্যাকসিন দেব। যাদের এনআইডি নেই তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছে।

দেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা চীনের সিনোফার্মার সঙ্গে এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেই টিকা উৎপাদন করার কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও পেয়েছি। পাশাপাশি আরেকটি জিনিসের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনের পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এটাকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই, এনফোর্স করতে চাই, পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যাতে যারা মাস্ক পরবে না তাদের কিছুটা হলেও শাস্তি দিতে পারেন, জরিমানা করতে পারেন। একটি অধ্যাদেশ লাগবে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা হয়তো বা সেদিকে যাব। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে ধীরে ধীরে অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হবে। ট্রান্সপোর্ট, দোকানপাটও খুলবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা আপনারা পরে পেয়ে যাবেন।

করোনাভাইরাস মহামারির দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১ জুলাই দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। পরে তা দফায় দফায় বাড়ানো হয়। বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কুরবানির ঈদের সময় ৮ দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার বিধিনিষেধ শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। সরকার আগে ঘোষণা দিয়েছিল, ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। ঈদের পর এবারের বিধিনিষেধ ‘কোনোভাবে শিথিল করা হবে না’ বলে সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হলেও শিল্পকারখানা মালিকদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে রোববার থেকে রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে দিন যত যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে মানুষও তত বাড়ছে, জীবিকার তাগিদে মানুষও আর বিধিনিষেধ মানতে চাইছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলমান কঠোর লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়ানোর পক্ষেই মত দিয়েছিল।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.