বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা : প্রতিকারের সমন্বিত পদক্ষেপ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহিংসতা প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও সামগ্রিকভাবে নারীর মানবাধিকার রক্ষা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় সকলে মিলে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কীভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করা যায়, কীভাবে সংসদ সদস্যদের যুক্ত করা যায় সে লক্ষ্যে আজকের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।

বুধবার (১৪ জুলাই) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। অনলাইনে অনুষ্ঠিত সভায় মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী (সাবেক) এবং এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুল আজিজ ও বেগম শবনম জাহান।

অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ বলেন, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কাজ করতে জনপ্রতিনিধিরা সবসময় সাথে আছেন, উভয়ে মিলে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আইন আছে তবে বাস্তবায়নে বাধা আছে। সহিংসতা আছে কেননা সমাজ এখনও সচেতন হয়নি, অনেক পিছিয়ে আছে। কিশোর গ্যাং কেন তৈরি হচ্ছে তা আমাদের এখনই খুঁজে বের করতে হবে, নয়তো একসময় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা একটি প্রাচীন প্রথা যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে, একইসাথে জেন্ডার বাজেট মনিটরিং ও নারী উন্নয়ন নীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করার দাবিও তিনি তুলে ধরেন।

সংসদ সদস্য শবনম জাহান সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার প্রণীত নানা আইনের উল্লেখ করে বলেন, নারী ও শিশুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠানের নয় বরং পরিবারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। পুলিশি তৎপরতা এবং আদালতের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, মহিলা মন্ত্রণালয়ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সহিংসতা প্রতিরোধে অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে।

এ সময় তিনি সকল অপরাধীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ও ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি করোনাকালীন নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে সরকারসহ সকলে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন।

মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। তিনি করোনাকালে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, শিশু ও তরুণ নারীদের যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি গত ছয় মাসে নারী ও কন্যার প্রতি সংঘটিত নানা ঘটনা ও ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ঘটনা বৃদ্ধির জন্য বেআইনি সালিশ, বেআইনি ফতোয়া, আইন ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বিদ্যমান আইন যথাযথ সময়ে যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা, নিরাপদ আশ্রয়, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অভাবসমূহকে উল্লেখ করে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন।

মডারেটরের বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর জীবনের অনেক দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে কিন্তু যখন এই উন্নয়ন ধারা বাধা দেয়ায় একটি গোষ্ঠী তৎপর হয়ে ওঠে, সমস্যা সমাধানে যখন সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়া হয় না তখন এসব ঘটনা নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.