নানা আয়োজনে পালিত হলো জাতীয় শিশুকিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ১৯৫২ সালের ২ মে যাত্রা শুরু হওয়া সংগঠনের এবারের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে রোববার রাতে ভার্চুয়ালি ‘এগিয়ে চলার ৬৯ বছর শীর্ষক’ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। শিশুকিশোররা আনন্দঘন পরিবেশে পরিবেশনাসহ আয়োজনে অংশ নেয়। এরপর আয়োজন করা হয় শিশু পার্লামেন্টের।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপক পান্না কায়সার। খেলাঘর শিশুসদস্য সেমন্তী ফেরদৌসীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় ‘আমরা তো সৈনিক, শান্তির সৈনিক অক্ষয় উজ্জ্বল সূর্য’। সেমন্তী বলেন, গোটা বিশ্বে যুদ্ধে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং মারণাস্ত্র তৈরিতে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা দিয়ে সব দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুকিশোরদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব। তাই আমরা শিশুরা স্লোগান তুলি, পারমাণবিক অস্ত্রগুলো সাগর জলে ডুবিয়ে ফেল।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল স্তম্ভের একটি হলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। শিশুদের মনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য খেলাঘর বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য-কলার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় খেলাঘর শিশুরা সমবেত কণ্ঠে গায়, ‘এসো সেতু গড়ি, মানুষে-মানুষে, জাতিতে-জাতিতে সেতু গড়ি’।

বক্তারা বলেন, খেলাঘর একসময় দেশজুড়ে শক্তিশালী কিশোর-বিজ্ঞান আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এতে সমাজে বিজ্ঞান-সংকৃতির বিকাশ ঘটে। বিজ্ঞানশিক্ষার প্রতি শিশুকিশোরদের আগ্রহ বেড়ে যায়। এছাড়া দেশে নিয়মিত সাহিত্য আসর পরিচালনায় খেলাঘরের ভূমিকা অপরিসীম। সমাজে প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক সাহিত্যিক শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের অনেকের হাতেখড়ি এই খেলাঘরে।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬৯-এর গণ-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময় খেলাঘর দেশমাতৃকার প্রয়োজনে ভূমিকা রেখেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার জন্য আগামী দিনগুলোতেও কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন খেলাঘর সংগঠকরা।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী বলেন, রণেশ দাসগুপ্ত ভারতে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকাকালে খেলাঘরের সঙ্গে ভারতের শিশুকিশোর সংগঠন কিশোরমেলা, সব পেয়েছির আসর, কিশোরবাহিনীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

খেলাঘর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সর্বভারতীয় শিশুকিশোর সংগঠন সব পেয়েছির আসরের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী অপূর্ব গাঙ্গুলি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। অন্যান্যের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ সাবেক খেলাঘর সংগঠক প্রফেসর মোসারফ আলী, জহুরুল আলম ঝরা, তাহমীন সুলতানা স্বাতী, আব্দুল মতিন ভূইয়া, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা প্রমুখ।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর, আঞ্চলিক শাখা আসরগুলো স্থানীয়ভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সারাদেশ থেকে ১২টি জেলার শিশুকিশোররা গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন করে। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুদের কথা শিশুরাই বলবে শীর্ষক শিশু পার্লামেন্টের আয়োজন করা হয় কেন্দ্রীয় খেলাঘরের পক্ষ থেকে। দেশের বিভিন্ন জেলার ৬০ জন শিশু-সাংসদ নিজ নিজ জেলার শিশুদের সমস্য তুলে ধরে। আয়োজনে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন সাংবাদিক চিত্তরঞ্জন শীল, অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন ঠান্ডু ও অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.