সোহরাব পাশা সত্তর দশকের অন্যতম শক্তিমান কবি। জন্ম : ১ জুলাই ১৯৫৬। কবিতায় তার প্রাতিস্বিক ভাবনা, অভিনব দৃশ্যকল্প নির্মাণ, মিথের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে জাদুময় আবেশ সৃষ্টি করেছে বাংলা কাব্য ভুবনে। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এলো তার ব্যক্তি জীবনসূত্রে টাঙ্গাইলের হলেও পরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে স্থায়ী বসবাস গড়ে তোলেন। ছিলেন কলেজের অধ্যাপক। বর্তমানে অবসরে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন : জুননু রাইন

যুগান্তর : একজন লেখককে পুরস্কার কতখানি প্রভাবিত করে?

সোহরাব পাশা : দেখুন স্বীকৃতি সবাই চায়। পুরস্কার এক ধরনের আত্মতুষ্টি দেয় কিন্তু এতে লেখকের লেখার মান বৃদ্ধি পায় বলে আমার মনে হয় না। তবে এতে লেখকের পরিচিতি বৃদ্ধি হয়। অনেক প্রতিশ্রুতিশীল কবি সাহিত্যিক আছেন যারা এ পদকে ভূষিত হননি। তাদের মধ্যে, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আবু কায়সার, আবিদ আজাদ, রুদ্র মোহম্মদ শহীদুল্লাহর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশ্ব সাহিত্যে জেমস্ জয়েস একজন খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক। তার ইউলিসিস উপন্যাসটি বিশ্বসাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ। তিনি কিন্তু নোবেল প্রাইজ পাননি।

যুগান্তর : সাহিত্যের অনেক সংগঠন। একজন লেখকের জন্য সংগঠনগুলো কতটুকু জরুরি?

সোহরাব পাশা : জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনেক সাহিত্য সংগঠন গড়ে উঠেছে। এ ধরনের সংগঠনগুলো সাহিত্যের প্রসারে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু একজন লেখকের জন্য এ ধরনের সংগঠনগুলো কোনোভাবেই আবশ্যক নয়। একজনের অন্তরে লেখক সত্তা না থাকলে, লেখালেখিতে তার অনুধ্যান না থাকলে, অনুভূতিতে ইচ্ছার প্রাবল্য অনুরণিত না হলে লেখক হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

যুগান্তর : মফস্বল থেকে লেখক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কী কী অন্তরায় আছে বলে আপনি মনে করেন?

সোহরাব পাশা : মফস্বল থেকে লেখক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তো কিছু প্রতিবন্ধতা রয়েছে। একজন লেখকের জন্য লেখক আড্ডা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক সময়ে বিউটি বোর্ডিং ছিল কবি শামসুর রাহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরী, আবুল হাসান, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীসহ প্রমুখ লেখকদের মিলন কেন্দ্র। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট লেখক আড্ডার কেন্দ্রস্থল হিসাবে গড়ে উঠেছে কিন্তু মফস্বলে এ ধরনের খুব কম। ভালো বই প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও রয়েছে সমস্যা। এখনো জেলা শহরে সব ধরনের বই পাওয়া যায় না। তবে অনলাইন সুবিধার কারণে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়েছে।

যুগান্তর : লেখক হওয়ার ক্ষেত্রে রাজধানীগামী হওয়ার বিষয়টি কিভাবে দেখেন?

সোহরাব পাশা : দেখুন লেখক হওয়ার ক্ষেত্রে রাজধানীতে অবস্থান করার কোনো অপরিহার্যতা আছে বলে আমি মনে করি না। এ দেশের অনেক খ্যাতিমান লেখক আছেন যারা রাজধানীতে অবস্থান করেননি। বিশিষ্ট যতীন সরকার, হাসান আজিজুল হক, হরিপদ দত্ত ঢাকা শহরে অবস্থান করেননি। এ কথা ঠিক যে রাজধানীতে অবস্থান করে একজন কবি অথবা ঔপন্যাসিক ভালো লেখক সান্নিধ্য পায়, সহজেই প্রয়োজনীয় পুস্তক সংগ্রহ করতে পারে।

যুগান্তর : লেখক জীবনে কি পেলেন বা কি পেলেন না-এ নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব করেন কি?

সোহরাব পাশা : প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ নিয়ে লেখালেখি শুরু করিনি। সাহিত্য চর্চা শুরু করেছিলাম দুটো লক্ষ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে। প্রথমত, নিজের আত্মতৃপ্তি ও চৈতন্যের উন্মেষ ঘটানো এবং একই সঙ্গে মানুষকে শৈল্পিক আনন্দ দেওয়া ও তাদের বোধের শেকড়কে বিস্তৃত করা। আমি মনে করি কবিতা অথবা যে কোনো শিল্প মাধ্যম মানুষের ভেতরের সৌন্দর্যবোধ, মানবতাবোধ ও দেশপ্রেম জাগ্রত করে। তাই প্রাপ্তির হিসাব কোনো কবি কখনো করে না।

যুগান্তর : মফস্বলে বসে যারা সাহিত্য চর্চা করেন তারা কতটুকু গুরুত্বসহকারে করেন?

সোহরাব পাশা : মফস্বলে অনেক অনুধ্যায়ী লেখক আছেন যাদের তন্ত্রীতে, মগজে, চেতনায় সাহিত্য ভাবনা বিদ্যমান।

যুগান্তর : ফেসবুকের কল্যাণে প্রচুর লেখালেখি দেখছি। এসব লেখক ও লেখালেখিকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন আপনি?

সোহরাব পাশা : সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে নিজেকে প্রকাশ করা খুব সহজ হয়ে গেছে। একজন কবি বা লেখক খুব সহজেই তার লেখাকে পাঠকের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে। ফেসবুকে লেখালেখি সংক্রান্ত অনেক গ্রুপ ও পেজ ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে লেখালেখিকে আমি ইতিবাচক হিসাবে দেখি। তবে অনেক লেখাই মানসম্পন্ন নয়।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.