মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা ফেরত দিচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটররা, তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত রয়েছে। একই মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ কিনলে এটা ফেরত পাওয়া যাবে এবং তা ওই প্যাকেজের মেয়াদের মধ্যেই ব্যবহার করতে হবে। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জন্য এই শর্তযুক্ত সুবিধা মিলছে। কিন্তু এতে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কি না, তা বিটিআরসি খতিয়ে দেখবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি বিটিআরসিকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। বিটিআরসিও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কমিটি গঠন করেছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে যারা গ্রাহকদের অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দিচ্ছে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তবে এই ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছ, তাতে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করা হবে। আর যেসব অপারেটর সাত দিনের কম মেয়াদে ডাটা প্যাকেজ বিক্রি করছে তাদেরও জবাবদিহির সম্মুখীন করা হবে।’
এর আগে গত সোমবার মন্ত্রী বিটিআরসি ও কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান টিকেসি টেলিকমের সঙ্গে টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, গ্রাহকদের অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী সময়ে কেনা ডাটা প্যাকেজের সঙ্গে ফেরত দিতে তিনি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে গতকাল মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা তারা আগে ফেরত দিত। আমি নিজেও এই ডাটা ফেরত পেয়েছি। কলড্রপ হলেও তার ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কিন্তু এখন তা পাওয়া যাবে না কেন? গ্রাহকরা যাতে তাদের কেনা ডাটা প্রয়োজন অনুসারে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায়, সে কারণে ডাটা প্যাকেজগুলোর মেয়াদ কমপক্ষে সাত দিন করারও নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখনো সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন কেন হচ্ছে না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জানিয়েছিলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের তিন দিনের, পাঁচ দিনের প্যাকেজসহ সব ছোট প্যাকেজ ওই বছরের ২৭ জানুয়ারির পর থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব ছোট প্যাকেজে প্রতারিত হয়ে আসছে গ্রাহকরা। ২৭ জানুয়ারির পর থেকে সাত দিনের নিচে টকটাইম বা ইন্টারনেটের আর কোনো প্যাকেজ থাকবে না। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এদিকে গ্রাহকদের অব্যবহৃত ডাটা ফেরত সম্পর্কে গতকাল মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি আংকিত সুরেকা কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলালিংক নেটওয়ার্কে গ্রাহকরা এরই মধ্যে ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ডের সুবিধা উপভোগ করতে পারছে। কোনো গ্রাহক যদি একটি ডাটা প্যাকের মেয়াদের মধ্যে যেকোনো মূল্যের আরেকটি একই মেয়াদের ডাটা প্যাক কেনে, তাহলে আগের প্যাকটির অব্যবহৃত ডাটা নতুন ডাটা প্যাকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘কিছু নির্দিষ্ট প্যাকেজ কেনার মাধ্যমে গ্রাহকদের এখনো অব্যবহৃত ডাটা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশে স্পেকট্রামের দাম বেশি। তার পরও আমাদের ডাটার মূল্য অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। ডাটা প্রাইস বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক চর্চার পাশাপাশি জটিল ও কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামোও উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।’
গ্রামীণফোনর পক্ষ থেকে জানানো হয়, একই মেয়াদ ও মূল্যের প্যাকেজ কিনলে তাদের গ্রাহকরা অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পাচ্ছে এবং সেটা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
Array